সন্দীপ গোস্বামীর দর্শন সন্দীপনী
"মানুষের তিনটি ইচ্ছা প্রকৃতি পূরণ করে, এর বাইরে অন্য সব ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে যায়। তাই ধনী, দরিদ্র, জ্ঞানী, মূর্খ, নারী, পুরুষ সবাই অতৃপ্ত। এটাই প্রকৃতির সাম্যবাদ।" সন্দীপ গোস্বামী
"যার সোনায় খাদ মেশানোর কথা, সে শিক্ষক । যার জেলখানায় থাকার কথা, তার হাতে প্রশাসন । যার রক্তের ফোঁটায় ফোঁটায় অপসংস্কৃতি, সে সংস্কৃতির ধারক-বাহক । আর যে মানুষটি স্বপ্নের ফেরিওয়ালা, তাঁর রাত কাটে দুঃস্বপ্নের অন্ধকারে । ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতে বেড়ে উঠছে তরুণ প্রজন্ম । ওদের জানতেই দিলাম না, শিক্ষার উদ্দেশ্য কী! প্রশাসন কাকে বলে! সংস্কৃতির অবদান কোথায়! বুঝতেই দিলাম না যে স্বপ্নহীন মানুষ জীবিত নয় ।" সন্দীপ গোস্বামী
"সৎমানুষদের মধ্যে সরলতা, মহানুভবতার সাথে গোপন অহংকারও থাকে । সেই অহংকার এই ধরণের মানুষদের প্রধান চালিকাশক্তি । অনেক সময় তাঁদের এই অহংকারকে ভুল বুঝে আমরা আহত হয়ে থাকি । তবু একজন সৎমানুষের মৃত্যু হাজার ক্রীড়াবিদ, অভিনেতা, প্রশাসক, লেখকের মতো গুণীজনদের মৃত্যু থেকে সমাজের গভীরে বেশি ক্ষত সৃষ্টি করে । সততার সাধনায় প্রতিভা নয়, চাই তীব্র ইচ্ছাশক্তি । আমরা ইচ্ছা করলেই সৎমানুষ হয়ে বেঁচে থাকতে পারি ।" সন্দীপ গোস্বামী
"পশুত্ব থেকে মনুষ্যত্বে উত্তরণকে সভ্যতা বলে। বিশ্বে এই সভ্যতা আজও সম্পূর্ণরূপে আসেনি। তাই নগর কখনও অরণ্যের থেকেও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে।" সন্দীপ গোস্বামী
"মহাপ্রভু চৈতন্যদেবের শিক্ষায় জাতের নামে বজ্জাতি অথবা নিচু জাতের জন্য মেকি সংরক্ষণের কোনও মান্যতা ছিল না। তিনি মেধাশক্তিকে সর্বদা মর্যাদা দিতেন। ব্যক্তির যোগ্যতা অনুযায়ী তিনি দায়িত্ব দিতেন। এমন বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষাকে প্রকৃত শিক্ষা বলা উচিত।" সন্দীপ গোস্বামী
"এই সময়ের পৃথিবীতে তুমি দুটি জিনিস অন্যদের থেকে পাবে । হিংসা অথবা করুণা । তোমার সফলতায় হিংসা এবং ব্যর্থতায় করুণা । তাই দুঃখ পেও না । করুণা নিয়ে বেঁচে থাকা অর্থহীন । তুমি ভালোবাসার রাজা বা রাণী হয়ে ভালোবাসা বিলিয়ে যাও, ভালোবাসার ভিখারি হতে চেও না । একদিন তোমার ভালোবাসায় লেখা হবে মানবজাতির ভবিষ্যৎ, তুমি হবে ইতিহাস ।" সন্দীপ গোস্বামী
"সনাতন হিন্দু ধর্মের সর্বাঙ্গীণ বিকাশ বৈষ্ণব সংস্কৃতিতে ঘটেছে। এই ধর্মের সৌন্দর্যও বৈষ্ণব সংস্কৃতিতে পূর্ণতা পেয়েছে। একইভাবে ইসলাম ধর্মের অভ্যন্তরীণ প্রেম, উদারতা সহ পূর্ণরূপ সুফি সংস্কৃতিতে প্রস্ফুটিত হয়েছে। ঐতিহাসিক ভক্তি আন্দোলনে এই দুই সংস্কৃতির মহামিলন ঘটেছিল।" সন্দীপ গোস্বামী
"হৃদয় দিতে হলে খন্ডে নয়, সমগ্রে দাও ; দোষ বা গুণে নয়, সমগ্র চরিত্রে দাও। জেনে রেখো যা ত্রুটিহীন, তাই কৃত্রিম।" সন্দীপ গোস্বামী
"দেশ বলতে শুধু দেশের সরকার, সংবিধান, জাতীয় পতাকা বা সংগীত নয়। দেশবাসী, পশু-পাখি, আকাশ, পাহাড়, সমুদ্র, মরুভূমি, অরণ্য, নদী, ঝরণা, দেশের ইতিহাস, দর্শন, সাহিত্য এবং সংস্কৃতিসহ সমগ্রকে নিয়ে একটি দেশ গড়ে ওঠে। খণ্ড নয় সমগ্র দেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং ভালোবাসা থেকে দেশপ্রেম সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে একজন দেশপ্রেমী বিশ্বপ্রেমী হয়ে ওঠে।" সন্দীপ গোস্বামী, তিনশো সন্দীপনী ও পথ
"জাতপাত সর্বদা ভয়ঙ্কর, তা সমাজ পোষিত হোক বা রাষ্ট্র পোষিত হোক। জাতপাত মানবজীবনে ক্যানসারের চেয়েও ক্ষতিকর যা অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎকে একইসাথে বিষাক্ত করে তোলে।" সন্দীপ গোস্বামী
"আমাদের সর্বাঙ্গে কোনও না কোনও ধর্ম আছে । আমরা যে মানুষ । সব ধর্ম আমাদের মানবিকতার কথাই শেখায় । বিজ্ঞান আমাদের বেঁচে থাকতে আর ধর্ম আমাদের ভালবাসতে শেখায় । এখানেই বিজ্ঞান এবং ধর্মের ঐতিহাসিক অবদান ।" সন্দীপ গোস্বামী
"সর্বশক্তিমান প্রত্যেক মানুষকে কিছু সময়ের জন্য একটি জীবন দিয়েছেন । সেই জীবন সেই মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত । অন্যের হস্তক্ষেপ করা একদম উচিত নয় । শিশু নিজের শৈশব উপভোগ করে নিজের দেহ গঠন করবে । কিশোর তার জিজ্ঞাসু দুটি নয়ন দিয়ে জগত চিনবে । যুবক গড়ে তুলবে কর্ম, জ্ঞান এবং প্রেমের সংসার । বয়স্কমানুষেরা খুশি মনে উত্তরসূরিদের প্রতি নজর রাখবে এবং তাদের মার্গদর্শন শেখাবেন ।" সন্দীপ গোস্বামী
"এই বিশ্বে নব্বই শতাংশ মানুষ সৎ, ভদ্র এবং সরল । অথচ এই পৃথিবীর সমস্ত ক্ষমতা দশ শতাংশ খারাপ মানুষ দখল করে রেখেছে । এর পিছনে একটাই কারণ যে খারাপ মানুষেরা সংগঠিত, কিন্তু ভালো মানুষেরা অসংগঠিত । যেদিন ভালো মানুষেরা সংগঠিত হবেন সেইদিন এই পৃথিবীর সমস্ত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে ।" সন্দীপ গোস্বামী
"শ্রীশ্রীচৈতন্যদেবের জন্মস্থান নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই, নানা মুনির নানা মত। নির্দ্বিধায় বলতে পারি জন্মস্থান সম্বন্ধীয় প্রতিটি মতামত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, অসত্য এবং মিথ্যা। সেই সময়ের চৈতন্য জীবনীকারেরা সুপরিকল্পিতভাবে মহাপ্রভুর জন্ম-মৃত্যুকে গৌণ রেখে, চৈতন্য জীবনচরিতকে আলোকিত করেছিলেন। তাঁরা চেয়েছিলেন, যুগে যুগে মানুষের নিত্য চেতনায় চৈতন্য আবির্ভূত হোক এবং মানুষের বিকৃত বোধে হোক চৈতন্যের তিরোধান। " সন্দীপ গোস্বামী
"ভারতবর্ষে কোন কালেই ব্রাহ্মণ্যবাদ আসেনি, এলে এই দুর্ভাগা দেশে সোনা ফলত। তথাকথিত ব্রাহ্মণ্যবাদ, প্রকৃতপক্ষে রাজতন্ত্র এবং পুঁজিবাদী ষড়যন্ত্রের নিকৃষ্টতম ফসল।" সন্দীপ গোস্বামী
"আমি ঈশ্বরের কাছে কিছু চাই নি,
চেতনার শিখরে যে উপলব্ধি
আত্ম প্রতীক হয়ে ওঠে, তাই দিয়েছি
আর অনেক আবেগ, নীরবতা।"
সন্দীপ গোস্বামী
"আত্মার সাথে আত্মার, আত্মার সাথে প্রকৃতির, আত্মার সাথে পরমাত্মার সংযোগ স্থাপনকে যোগ বলে। নিজের দোষত্রুটি বিয়াগ যোগের প্রথম ধাপ। " সন্দীপ গোস্বামী
"ভাগ্যবান অযোগ্যের দাপাদাপি এবং ভাগ্যহীন যোগ্য মানুষের ক্রন্দন এই সময়ের ভবিতব্য! প্রকৃতির এই নিষ্ঠুর আচরণের কোন গ্রহণযোগ্য কারণ আজও খুঁজে পাইনি!" সন্দীপ গোস্বামী
"আমি জানতাম না, ঈশ্বর, আল্লাহ, গড কেমন দেখতে, কোথায় তাঁদের দেখতে পাব! তাই খুঁজেছি মন্দির, মসজিদ, গির্জায়...তাঁকে পেয়েছি সেই মানুষগুলির মধ্যে যাঁরা ঈশ্বরকে ভালোবাসেন, আল্লাহর মধ্যে খুঁজে পান মানবপ্রেম, হৃদয়ের গডকে শ্রদ্ধা করেন। এই মানুষদের উদারতা, মানবতা এবং ভালোবাসা আমার মাথা নত করে দিল।" সন্দীপ গোস্বামী
"কে তোমায় প্রকৃত ভালবাসে, এটা বুঝতে না পারাই একজন মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় অজ্ঞতা এবং নির্বুদ্ধিতা!" সন্দীপ গোস্বামী
"বৃহৎ জীবন শুধুমাত্র বড় বড় কথা বলেনা, বড় বড় কাজ করে। কথা নয়, বৃহৎ কর্মের মাধ্যমে মহত্ত্বের প্রকৃত প্রকাশ ঘটে থাকে।" সন্দীপ গোস্বামী
"অনেকে বলেন অর্থাভাবে ভালোবাসা খিড়কি দিয়ে পালিয়ে যায়। অনেকে বলেন ভালোবাসার জন্য মনের মিল চাই, বিশ্বাস চাই, আরও কত কিছু....আমি বুঝি ভালোবাসার জন্য শুধু এক বুক বিশুদ্ধ ভালোবাসা চাই। এই ভালোবাসায় একজন নয়, দুইজন নয়, একসাথে সমগ্র জগৎকে ভালোবাসা যায়।" সন্দীপ গোস্বামী
"যার হৃদয়ে শ্রদ্ধা আছে এবং চেতনায় শুভবুদ্ধি I সেই সবাইকে ভালোবাসতে পারে I" সন্দীপ গোস্বামী
"সমস্যার স্তূপে বসে লিখতে থাকে সময়ের ইতিহাস, মানবতাবাদ। কেউ বলে রম্যরচনা, কেউ বলে কবিতা।" সন্দীপ গোস্বামী
"যিনি সত্যের পথে হাঁটছেন, তার কাছে সর্বপ্রকার ধন আসতে থাকবে। অজান্তে তাকে অনুসরণ করা প্রকৃত মানুষের দল তার সাথে হাঁটতে থাকবে। পথসঙ্গীদের মুগ্ধতা, শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসায় তার চারিদিকে ছেয়ে থাকবে শান্তির বাতাবরণ, এমন সম্মান সে পেতে থাকবে যা কোনদিন কল্পনাও করতে পারেনি। এমনকি সে অমরত্ব পেয়ে যেতে পারে।" সন্দীপ গোস্বামী, তিনশো সন্দীপনী ও পথ
"পিছন থেকে নিরন্তর বিষাক্ত ছোবল খেতে খেতে জীবনটাই হয়ে উঠছে অমৃতের ভাণ্ড! অবাক, হতবাক!" সন্দীপ গোস্বামী
"যখন কোন মানুষ উপলব্ধি করতে পারেন যে, এই দুনিয়ায় নিঃস্বার্থ ভালোবাসা বলে কিছু নেই। মৃত্যুর কিছুদিনের মধ্যে তার জন্য কেউ অশ্রুপাত করবেনা এবং তার স্মৃতিচারণ আর কেউ করবেনা। সেইদিন থেকে মানুষটি শান্ত হতে শুরু করে।" সন্দীপ গোস্বামী
"সর্বগ্রাসী বোধের কারণে ডাইনোসরের বিনাশ ঘটেছে, মানুষও এই সর্বগ্রাসী বোধকে প্রশ্রয় দিচ্ছে! জীবনে বোধ খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই বোধে জীবের বিনাশ, আবার বোধেই উত্তরণ ঘটে থাকে।" সন্দীপ গোস্বামী
"পৃথিবীতে সবচেয়ে শক্তিশালী ভাষার নাম, অনুভূতির ভাষা। এই ভাষায় দক্ষতা, একজন মানুষকে শ্রেষ্ঠ করে তোলে।" সন্দীপ গোস্বামী
"এই সময়ে পিতামাতা ছাড়া আর কাউকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসতে নেই। নচেৎ বুক ফাটবে নিশ্চিত।" সন্দীপ গোস্বামী
"মন্দির, মসজিদ, গির্জা, গুরুদ্বার, স্বগৃহে, যেখানে খুশি সর্বশক্তিমানের কাছে প্রার্থনা করা যেতে পারে। নিজের জন্য না হয়ে, তা যেন বিশ্বকল্যাণে আয়োজিত হয়। অন্যথায় সমস্ত প্রার্থনা নিষ্ফল হয়ে যায়।" সন্দীপ গোস্বামী
"যে কথাটি আমাদের মননে ঢেউ তোলে, কেন ভালো মানুষেরা কষ্ট পাচ্ছেন! গভীর পর্যবেক্ষণ করলেই এর উত্তর পাওয়া যাবে। বাইরের ভালো আর অন্তরের ভালোর মধ্যে একটা টালমাটাল অবস্থা এদের মধ্যে দেখা যায়। তাদের এক পা সত্যে এবং অন্যটি মিথ্যায়। এই দোদুল্যমান অবস্থায় তারা বেসামাল। তাই সত্য-পথযাত্রীদের উচিত সত্য পথের মাঝখান দিয়ে হাঁটা, শিরদাঁড়া টানটান করে। তখন তিনি আর কোন সজীব বস্তু নন, হয়ে উঠবেন 'মানুষ'।" সন্দীপ গোস্বামী, তিনশো সন্দীপনী ও পথ
"প্রকৃতি কী সুন্দর! জীবন কত সুন্দর! তুমিও খুব সুন্দর! সৃষ্টিকর্তা নিশ্চয় অপূর্ব! এই ভাবনা আমাকেও সুন্দর করে তোলে!" সন্দীপ গোস্বামী
"মনের মতো বাক্য অনেক সময় উৎকৃষ্ট নাও হতে পারে। যে বাক্য মনকে উৎকৃষ্ট করে তোলে তাকেই উৎকৃষ্ট বাক্য বা দর্শন বলে।" সন্দীপ গোস্বামী
"সব ধর্মের মূল কথা হল, জগতকে ভালোবাস এবং জগত থেকে ভালোবাসা গ্রহণ কর। এই সরল সত্যকে যারা বুঝতে পারেনা, তারা ধর্মহীন জটিল প্রকৃতির মানুষ।" সন্দীপ গোস্বামী
"প্রতিটি মানুষের জীবনে আসে প্রেম, আসে বসন্ত, আসে উত্তরণ। আবার অনাদরে, অবহেলায় দ্রুত হারিয়েও যায়।" সন্দীপ গোস্বামী
"পরিস্থিতির চাপে যখন দাতাকে গ্রহীতা হতে হয়, সেই সময় পরমাত্মারও নয়ন ছলছল করে।" সন্দীপ গোস্বামী
"ভালোবাসা এবং প্রেম এক নয়! হৃদয় কেন্দ্রিক আনন্দের উচ্ছ্বাসকে ভালোবাসা বলা যায়, যা ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু প্রেম হল আত্মাস্থিত পরমানন্দের নীরব প্রবাহ, যা চিরস্থায়ী।" সন্দীপ গোস্বামী, তিনশো সন্দীপনী ও পথ
"মানুষ প্রকৃতিগত দুর্বল সৃষ্টি। দুর্বলতা থেকে সবলতায় উত্তরণের পথ হল শিক্ষা।" সন্দীপ গোস্বামী
"মিশরের মানুষ প্রত্যেক ভারতবাসীকে 'প্রফেসর' বলে সম্বোধন করেন। উনারা বিশ্বাস করেন যে ভারতবাসীরা জন্মগত 'বিশ্বশিক্ষক'। ভারতের মতো মিশরও বিশ্বে প্রাচীনতম সভ্যতা।" সন্দীপ গোস্বামী
No comments:
Post a Comment